ক্রনিক ব্যথা না সারলেও তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় | Even If The Chronic Pain Does Not Go Away, It Can Be Controlled
ক্রনিক ব্যথা না সারলেও তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় | Even If The Chronic Pain Does Not Go Away, It Can Be Controlled |
অনেকেই জীবনের নানা সময়ে বিভিন্ন ব্যথা-বেদনা, হ্যাঁচকাব্যথা অনুভব করেন। এমনকী আচমকা ব্যথা শুরু হলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রও উজ্জীবিত হয়ে যায়। যখন মানবশরীরে কোনও আঘাত লাগে তখন ব্যথার সংকেত সেই আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে মেরুদণ্ড হয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছয়। তারপরে আঘাত যত সারতে থাকে ব্যথার প্রাবল্য তত কমতে থাকে। তবে ক্রনিক পেইন বা ক্রনিক ব্যথা টিপিক্যাল পেইনের থেকে ভিন্ন। ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সবসময়ে ব্যথা থাকার একটা অনুভূতি যায়, যদিও আঘাত সেরে যায়, তবুও ব্যথা থাকে। এটা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ক্রনিক ব্যথার জন্য স্বচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা, শরীরের ঠিকমতো মুভমেন্ট করা, শারীরিক শক্তি সবই কমে যায়। যার ফলে প্রত্যহ সমস্ত কাজকর্ম এমনকী নিজের দৈনন্দিন কাজ করাটাও রীতিমতাে চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মানবশরীরে কোন ব্যথা যদি একটানা ১২ সপ্তাহ বা তার বেশি চলে তাহলে তাকে বলা হয় ক্রনিক ব্যথা। কখনও মনেহয় ব্যথাটি তীক্ষ্ণভাবে হাড়ে বিঁধছে, আবার কখনও ব্যথার তীব্রতা ততটা থাকে না, কখনও জায়গাটায় ব্যথার সঙ্গে জ্বালাপােড়ার অনুভূতি থাকে, কখনও চুলকানির মতাে উপসর্গ। অনেক সময়ে নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই ব্যথা যেমন আসে, তেমনি কারণ ব্যতীত ব্যথা চলে যায়। শরীরের যে কোনও জায়গায় ক্রনিক ব্যথা হতে পারে। একেক জায়গায় ব্যথার প্রাবল্য একেক রকমের হয়। সাধারণত যে ধরনের ক্রনিক ব্যথাগুলি বেশি কমন তা হল—মাথাব্যথা, অপারেশন পরবর্তী ব্যথা (পােস্ট সার্জিক্যাল পেইন), আঘাত লাগার পরবর্তী ব্যথা (পােস্ট ট্রমা পেইন), লাে ব্যাক পেইন, ক্যানসারের ব্যথা, আথ্রাইটিসের ব্যথা, কোনও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্নায়ুতে ব্যথা (নিউরােলজিক্যাল পেইন), সাইকোজেনেরিক পেইন (যে ব্যথার কারণ কোনও রােগ, আঘাত বা স্নায়ুর ক্ষতি হওয়া নয়)। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেইন মেডিসিনের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে ক্রনিক পেইনে ভুগছেন।
ক্রনিক ব্যথার কারণ
প্রাথমিকভাবে আঘাত থেকেই ক্রনিক ব্যথা হয়। যেমন ব্যায়াম করতে গিয়ে কোনও পেশিতে লেগে গেল, বা উপুড় হতে গিয়ে হ্যাঁচকা ব্যথা। চিকিৎসকদের মতে, কোনও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেই তখন ক্রনিক পেইনের সমস্যা দেখা যায়। আর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্তু হওয়া মানেই প্রচণ্ড ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে ভােগাবে। সবসময়ে যে আঘাতের চিকিৎসা করলেই ব্যথা চলে যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। অনেক সময়ে তাে কারও কারও ক্ষেত্রে আগে কোনও শারীরিক আঘাত ছাড়াও ক্রনিক পেইনের সমস্যা থাকতে পারে। তবে আঘাত ছাড়া ক্রনিক ব্যথার অন্য কারণগুলি ঠিক কী সে সম্পর্কে এখনও বিশদে জানা যায়নি। তবে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা যে এর জন্য দায়ী সে-বিষয়ে চিকিৎসকরা একমত, যেমন ক্রনিক ফ্যাটি সিনড্রোম (সবসময়ে ক্লান্ত লাগা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার অনুভূতি), এন্ডােমেট্রিওসিস (স্ত্রীরােগ), ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিজিজ (খাদ্যনালীতে কোনও কারণে প্রদাহ চলতে চলতে সেখানে ক্রনিক ব্যথা হওয়া, টেম্পােরােম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট ডিসফাংশন (মুখের জয়েন্টের সমস্যা) ইত্যাদি।
ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রে কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন?
যে কোনও বয়সের মানুষেরই ক্রনিক পেইন হতে পারে তবে বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বেশ কিছু পরিস্থিতি এই ক্রনিক পেইনের জন্ম দেয় বা সমস্যা বাড়িয়ে তােলে এবং তা হল শরীরে কোনও কারণে আঘাত লাগলে, অপারেশনের পরে, মহিলাদের বেশ কিছু রােগে ও ওবেসিটি গ্রাস করলে।
কীভাবে এর চিকিৎসা হবে?
ক্রনিক ব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই হল ব্যথা কমিয়ে শরীরকে যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষম করে তােলা। প্রত্যেক রােগীর জন্য আলাদা আলাদা পেইন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান থাকে। যা মূলত ক্রনিক ব্যথার উপসর্গ ও বাকি শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। বেশ কয়েকটি ব্যথানাশক এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে অ্যাসিটামিনােফেন (টিলিনােল), নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি গ্রুপের ড্রাগস সংক্ষেপে এনএসএআইডি, এর মধ্যে পড়ে অ্যাসপিরিন বা আইব্রুপ্রােফেল গােত্রের ওষুধ। অনেক সময়ে অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টি কনভালসান্ট ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। রােগের গুরুত্ব বুঝে কখনও আবার দেওয়া হয় ইলেকট্রিক্যাল স্কিমুলেশন, যাতে শরীরের পেশিতে ক্রনিক ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। স্নায়ুকে ব্লক করার কিছু ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, যা স্নায়ু থেকে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত যাওয়া আটকায়। আকুপাংচার করেও রােগ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অনেক সময়ে ক্রনিক ব্যথা নিরাময়ে লাইফস্টাইল রেমিডিও দেওয়া হয়, যেমন ফিজিক্যাল থেরাপি, তাই চি, যােগব্যায়াম, মিউজিক থেরাপি, সাইকোথেরাপি, ম্যাসাজ এবং ধ্যান। আর একটা কথা মনে রাখবেন মানসিক যন্ত্রণা খুব বেশি হলেও শরীরে ব্যথা হয়, কাজেই মনকে ভালাে রাখুন, চাঙ্গা থাকুন। সঠিক ডায়েট মেনে চলুন, গড়ে সাত ঘণ্টা ঘুমােন ও এক্সারসাইজের মধ্যে নিয়মিত নিজেকে রাখুন। ক্রনিক ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে।