বাংলা নববর্ষ | পহেলা বৈশাখ - বাংলা রচনা | Bengali Essay on Bengali New Year | Bengali Paragraph Writing for Class III - VI বাংলা নববর্ষ বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পহেলা বৈশাখ এ উৎসবটি পালিত হয়। পৃথিবীর যেখানে যত বাঙালি আছে, তারা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ পালন করে। বাংলাদেশে এক সময় এই দিনে পূন্যহ অনুষ্ঠান হতো জাঁকজমকভাবে। এখন হালখাতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, কবিগান, যাত্রা, বৈশাখী মেলা, আবৃতি-নাচ গানে মুখরিত থাকে সারাদেশ। এদিনে আমরা একে অন্যকে বলি শুভ নববর্ষ। এদিনে শহর অঞ্চলেও পান্তা ইলিশ খাওয়ার চল হয়েছে ইদানিং। নববর্ষের দিনে ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা নানা রঙের শাড়ী পড়ে নববর্ষের আনন্দে মেতে ওঠে। চারদিকে তৈরি হয় এক বর্ণিল পরিবেশ। বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। বাংলা নববর্ষ | পহেলা বৈশাখ - বাংলা রচনা | Bengali Essay on Bengali New Year | Bengali Paragraph Writing for Class III - VI বাংলা নববর্ষ | পহেলা বৈশাখ - বাংলা রচনা | Bengali Essay on Bengali New Year | Bengali Paragraph Writing for Class III - VI
![]() |
জাতিভেদ - বাংলা রচনা | Bengali Essay on Casteism | Bangla Paragraph Writing for Class III - VI |
জাতিভেদ
সমাজকে নানা শ্রেণিতে বিভক্ত করে বিভিন্ন প্রকার মর্যাদা ও সুযােগসুবিধা দেওয়াই জাতিভেদের মূল কথা। ভারতে হিন্দু সমাজে জাতিভেদ যেমন উৎকটরূপে দেখা যায়, তেমন বােধ হয় আর কোনাে দেশে নয়। এদেশে হিন্দুদের মধ্যে জাতিভেদের মূল ভিত্তি বােঝাবার জন্য শ্রীকৃষ্ণের একটি উক্তি প্রায়ই উদ্ধৃত করা হয়- চাতুর্বণ্য ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।অর্থাৎ গুণ এবং কর্মের বিভাগ অনুসারেই আমার দ্বারা চার বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষয়িত্র, বৈশ্য, শূদ্র) সৃষ্ট হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণই এমন করেছিলেন কিনা, অথবা শ্রীকৃষ্ণ ঠিক কোন্ যুগে এটি করেছিলেন, এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন। কিন্তু এটা ঠিক যে, প্রায় দু-হাজার বছর যাবৎ যে বৈদিক সভ্যতা বিরাজ করেছিল, তার এক প্রধান অংশে হিন্দুরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—প্রধানত এই চার বর্ণে বিভক্ত ছিল। ব্রাহ্মণ পৌরােহিত্য, সমাজবিধান পরিচালনা ইত্যাদি করতেন। ক্ষত্রিয়ের প্রধান কাজ ছিল যুদ্ধ ও দেশরক্ষা। বৈশ্যগণ ব্যাবসাবাণিজ্য করতেন। শূদ্রদের কাজ ছিল অন্য তিন বর্ণের সেবা করা। এইভাবে প্রাচীন ভারতেই জাতিভেদ প্রথা বিস্তৃত হয়ে পড়ে। সেকালে এর কতদূর প্রয়ােজন ছিল তা সঠিক বােঝা যায় না। কিন্তু এই বর্ণবিভাগকে অনুসরণ করে ভারতে জাতিভেদ এক ভয়ানক অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে। এর ফলে সমগ্র ভারতের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে এবং হচ্ছে। এদেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ অস্পৃশ্য, অর্থাৎ উচ্চতর বর্ণের মানুষেরা তাদের স্পর্শ করে না। এইসকল মানুষ অতি দরিদ্র, অবনত ও লাঞ্ছিত। মহাত্মা গান্ধি এদের 'হরিজন' বলে সম্মান দিয়েছেন, এঁদের সম্মান রক্ষার জন্য কিছু আইনও আছে, কিন্তু তাতেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। ফলে জীবনের কোনাে ক্ষেত্রেই ভারতীয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে না। বিবাদ যেমন বিবাদকে বাড়িয়ে চলে, জাতিভেদও তেমনই অন্যান্য ভেদকে বাড়িয়ে চলেছে। আজ এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ পরস্পরকে আপন ভাবে না, দরিদ্রের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি নেই। জোতদার ও কৃষকের মধ্যে, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে বিভেদ যেন বেড়েই চলেছে। মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের মতাে বর্ণভেদ নাই, তবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ভেদ আছে। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যে বিদ্বেষ আছে, তা প্রায়ই রক্তাক্ত সংঘর্ষের সৃষ্টি করে।
জাতিভেদের এই ভয়াবহতার প্রতি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রচণ্ড বিদ্রুপ বর্ষিত হয়েছে তার কবিতায় -
'জাতের নামে বজ্জাতি সব।
জাত-জালিয়াতি খেলছে জুয়া।'
সত্যই, সুবিধাভােগী কিছু মানুষই নিজেদের স্বার্থে জাতিভেদ বাঁচিয়ে রেখেছে। মানবসমাজের মঙ্গল চাইলে জাতির নামে এই জুয়াখেলা বন্ধ করতে হবে। এক বিশ্বপিতার সন্তান রূপে, একই ধরিত্রীর লালিত মানুষ রূপে একে অপরকে ভালবাসতে হবে, পরস্পরকে মর্যাদা দিতে হবে। সেই পথেই মানুষের মুক্তি।